পাটের দামে বেজার চাষি

রকিবুল ইসলাম রকি : চলতি বছরের কৃষকের পাটের ফলন ভাল হলেও দাম নিয়ে হতাশায় পড়েছে তারা।বাজারে পাটের চাহিদা ভালো থাকলেও আশানুরূপ দাম পাচ্ছে না কৃষক।এবছরে পাট নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে প্রথম থেকেই।বৃষ্টি না হওয়ায় খাল, বিল,পুকুর গুলোতে পর্যাপ্ত পানি ছিল  না। এ কারণে শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে পানি দিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছিল, আর এতে পাট চাষীদের গুনতে হয়েছিল অতিরিক্ত খরচ।তবুও চাষিরা ভেবেছিল পাটের দাম ভালো হলে লোকসান কাটিয়ে উঠবে। কিন্তু, সে গুড়ে বালি।পাটের আশানুরূপ দাম না পেয়ে হতাশ প্রকাশ করেছে মেহেরপুর গাংনী উপজেলার পাট চাষীরা। 



পাট চাষিরা জানান,চলতি বছরের বৃষ্টি না হওয়ার কারণে পাট নিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল এবং এতে গুনতে হয়েছে বাড়তি টাকা এবং আর পুকুর ভাড়া নিয়েই পাট জাগ দিতে হয়েছিল। বিঘাপ্রতি দিতে হয়েছে ১২'শ-১৫'শ টাকা। পাটের ছাল ছাড়াতে জনপ্রতি খরচ দিতে হয়েছে ৬০০-৭০০ টাকা।সার,ডিজেল, মজুরি খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে।সবমিলিয়ে পাটের যে দাম তাতে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। 




পাট চাষি ময়নাল হোসেন জানান,এবছর অনাবৃষ্টির কারণে পাট নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল। একদিকে সার,ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি অন্যদিকে বাড়তি খরচ।তবে পাটের দাম ভালো পেলে আর কষ্ট থাকতো না।আশা ছিল পাটের দাম ভালো পাব। 



পাট চাষি আব্দুর রশিদ জানান,চলতি বছর অনাবৃষ্টির কারণে বাড়তি খরচ গুনতে হয়েছে। খাল,বিল ও পুকুরে পানি না থাকায় শ্যালো ইঞ্জিন চালিত সেচ পাম্প দিয়ে পানি দিয়ে পাট জাগ দিতে হচ্ছে।বিঘাপ্রতি খরচ লেগেছিল ১০০০-১২০০ টাকা।এর মধ্যে আবার সার,ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি অন্যদিকে লোডশেডিং এর ভোগান্তি। পাটের যে দাম তাতে মূল খরচটাও উঠছে না।



পাট চাষি জয়নাল আবেদীন জানান,আমার

১ বিঘা ৮ কাঠা পাট ছিল।মোট পাট হয়েছে 

১১ মণ।মোট খরচ হয়েছে ২৩ হাজার টাকা। পাট বিক্রয় করেছি ১৮ হাজার টাকায়।মণ প্রতি পড়েছে  ২১'শ-২২'শ টাকা।আর আমি ও পরিবারের লোকজন যে শ্রম দিয়েছি সেটা বাদে ৪-৫ হাজার টাকা ঘরে উঠেছে।তাই আমাদের পরিশ্রমের হিসাব করলে পাটের টাকা এবার ঘরে তুলতে পারিনি। 

সার,ডিজেল,মজুরি,সেচ সহ সবকিছুর খরচ বেড়েছে।তাই সার,ডিজেল,মজুরি,সেচ সহ সবকিছুর খরচ না বাড়লে পাটে লাভ হতো এবছর। 





পাট ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম জানান,বর্তমানে পাটের বাজার ২১'শ-২২'শ টাকা চলছে।দেড় মাস আগেও পাটের দাম ছিল ২৪'শ-২৫'শ টাকা। আর নদী এলাকার পাটের দাম ছিল ২৬'শ টাকা।বর্তমানে ২৪'শ-২৫'শ চলছে।কারণ নদীর পাটের রং থাকে সুন্দর।পাটের চাহিদা না থাকায় দাম বাড়ছে না।আশা করছি চাহিদা বাড়লে পাটের দাম বাড়বে।


গাংনী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়,চলতি বছর উপজেলায় সাড়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছিল।অনাবৃষ্টির কারণে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে চাষিদের।তবে পাটের দাম ভালো না  থাকায় হতাশ চাষিরা।


গাংনী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন জানান,চলতি বছর পাট জাগ বা পচন দেয়া নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল পাট চাষিদের। অনাবৃষ্টির কারণে এই ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছিল।এবছর পাট চাষ করতে গিয়ে চাষীদের বাড়তি খরচও গুনতে হয়েছে।অনাবৃষ্টির কারণে পুকুর ভাড়া নিয়ে পাট জাগ দিতে হয়েছে।পাটের ভালো দাম পেলে চাষিদের মুখে হাসি ফুটতো।


শেয়ার করুন